বৃহস্পতিবার, ৩১ Jul ২০২৫, ০৫:০০ পূর্বাহ্ন

গাবতলী-পাটুরিয়া মহাসড়কে ৭ মাসে ২৫ দুর্ঘটনায় সেলফি পরিবহন

অনলাইন নিউজ ডেস্ক,ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম॥ রাজধানীর গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া মহাসড়কে আতঙ্কের নাম সেলফি পরিবহন। এই সড়কে যত দুর্ঘটনা ঘটে তার অর্ধেকের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত সেলফি পরিবহনের বাস। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে সেলফি পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হয় দুই শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ মানুষ আগুন ধরিয়ে দেয় বাসটিতে।

হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে গত ১২ জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে এই মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭০টি। নিহত হয়েছে ২৯ জন। আহত হয় ১০০ জনেরও বেশি। এর মধ্যে ২৫টি দুর্ঘটনায় সেলফি পরিবহনের বাসের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এই হিসাব শুধু মানিকগঞ্জ অংশের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ মে বারবাড়িয়া এলাকায় সেলফি পরিবহনের দ্রুতগতির একটি বাস খাদে ছিটকে পড়ে। গুরুতর আহত হন মানিকগঞ্জের চা বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন। সমঝোতায় তাঁকে সেলফি পরিবহন দেয় ১৭ হাজার টাকা। বিষয়টি স্বীকার করে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মামলা করলে কি এই টাকা পেতাম?’ ১৮ দিন হাসপাতালে থাকার পর বর্তমানে তিনি বাড়িতে চিকিৎসাধীন।

গোলড়া হাইওয়ে থানার পরিসংখ্যান সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত মহাসড়কের বারবাড়িয়া থেকে তরা সেতু পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকায় সেলফি পরিবহনের বাসের বিরুদ্ধে তিনটি দুর্ঘটনার মামলা হয়েছে। নিহত হয়েছে চারজন, আহত ১৭ জন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, মূলত দুর্ঘটনা হয়েছে আটটি, কিন্তু সমঝোতা হওয়ায় বাকি পাঁচটির মামলা হয়নি।

এদিকে হাইওয়ে পুলিশের বরঙ্গাইল ফাঁড়ির ইনচার্জ জাকির হোসেন জানান, গত সাত মাসে তরা সেতু থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকায় সেলফি পরিবহনের বাসের বিরুদ্ধে আনুমানিক ছয়টি দুর্ঘটনার মামলা হয়েছে। এখনো দুটি বাস ফাঁড়িতে আটক রয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ফাঁড়ির এক সদস্য জানান, আরো অন্তত আটটি দুর্ঘটনায় সমঝোতার কারণে মামলা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেলফি পরিবহনের একজন সুপারভাইজার জানান, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত এই পরিবহনের প্রায় ২০০টি ৪৮ সিটের বাস চলাচল করে। মেরামতে থাকায় প্রতিদিন গড়ে চলাচল করে ১৫০টি। বাসগুলো একসময় আন্ত জেলা দূরপাল্লায় চলাচল করত। দীর্ঘদিন ব্যবহারে ফিটনেস হারানোয় দূরপাল্লায় চলাচলের সক্ষমতা নেই। সেখান থেকে সরিয়ে গাবতলী-পাটুরিয়া রুটে (৫০ কিলোমিটার) স্বল্প দূরত্বে এই বাসগুলো ঢোকানো হয়েছে। ফলে বেশির ভাগ বাসের এই পথে চলাচলের অনুমোদন নেই। সেই সঙ্গে বেশির ভাগ চালকের লাইসেন্সও নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই প্রান্ত থেকে প্রতি পাঁচ মিনিট পর একটি করে বাস ছেড়ে যায়। প্রতি ট্রিপে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পরিবহন মালিককে দিতে হয়। এর সঙ্গে আছে বিভিন্ন ধরনের চাঁদা। এরপর যা থাকে, সেই টাকা চালক ও সহকারী পেয়ে থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেলফি পরিবহনের কয়েকজন চালক জানান, প্রতিদিন আপ-ডাউন চার ট্রিপ দিতে না পারলে মালিক এবং চাঁদার টাকা তুলে তাঁদের কিছুই থাকে না। ফলে ট্রিপ পাওয়ার জন্য একই কম্পানির আরেকটি বাসের সঙ্গে তাঁদের প্রতিযোগিতা করতে হয়, যে কারণে তাঁরা দ্রুত গাড়ি চালান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চালকদের কয়েকজন অকপটে স্বীকার করেন, গাড়ি চালাতে পারলেও তাঁদের অনেকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। মালিকরা তাঁদের কাজ দেন যাতে পারিশ্রমিক কম দিতে হয়।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক এবং জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু সম্প্রতি ফেসবুকে লেখেন, ‘গাবতলী-পাটুরিয়া মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বেপরোয়া সেলফি পরিবহনের বাস। ’ তিনি এই বাস বয়কটের আহবান জানান।

গাবতলী-পাটুরিয়া মহাসড়কে দুর্ঘটনায় সেলফি পরিবহনের সম্পৃক্ততা অন্যান্য গাড়ির তুলনায় বেশি স্বীকার করেন হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। তবে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে সম্প্রতি সেলফি পরিবহনের মালিকপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সেলফির সব গাড়ির কাগজপত্র আপডেট করা, চালকদের প্রশিক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালানোর বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। ’

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com